রাজু আহাম্মেদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ
আদাতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কাঁঠালবাড়ী নুরুল্লাহ ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসায় জ্যেষ্ঠতা উপেক্ষা করে অস্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে গোপনে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় চাকুরিপ্রার্থী এবং উপাধ্যক্ষ পৃথক মামলা করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস ও দাপ্তরিক কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কথা জানিয়েছেন সাধারণ শিক্ষক ও এলাকাবাসী।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, কাঁঠালবাড়ি নুরুল্লাহ ফাযিল ডিগ্রী মাদরাসায় গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে অধ্যক্ষ পদটি শূন্য হয়। জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান উপাধ্যক্ষ মো. মেহের আলী। ম্যানেজিং কমিটি ওই অধ্যক্ষকে দিয়ে অর্থের বিনিময় নিয়োগ বাণিজ্য করতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে অজ্ঞাত কারণে তাকে সাময়িক বরখাস্ত দেখিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করতে অত্র মাদরাসার আরবি প্রভাষক হারুনুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফতাব উদ্দিন। নিয়ম অনুযায়ী মো. মেহের আলী বৈধ অধ্যক্ষ হওয়ায় নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তার সই বাধ্যতামূলক থাকলেও ম্যানেজিং কমিটি ব্যাকডেটে তার সই স্বাক্ষর জাল করে নিয়োগ সম্পন্ন করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। পরে তিনি বিষয়টি জানতে পেয়ে আদালতে একটি মামলা করেন। যার নং-১১৬/২৪। পরে বিষয়টি তদন্ত প্রমাণিত হওয়ায় আদালত গত ৪ এপ্রিল ২০২৪ইং তারিখে নিয়োগ সম্পন্ন না করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। ফলে চলতি ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসায় নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল হয়।
আদালত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করলেও ম্যানেজিং কমিটির আর্শীবাদপুষ্ট ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ অত্যন্ত গোপনে অধ্যক্ষ পদে রাজারহাট উপজেলার চাঁন্দামারী ফাযিল মাদরাসার সহকারী অধ্যাপক নুরে আলম সিদ্দিকীকে নিয়োগ দিয়েছেন। যেকারণে তিনি পূর্বের কর্মস্থলে পদত্যাপ পত্র জমা দেয়ায় চলতি এপ্রিল মাসের বেতন-ভাতা স্থগিত করেছেন কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া ল্যাব সহকারী পদে সাধবী আক্তার এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নাফসীন নাহারকে চূড়ান্ত করে পরীক্ষার ফলাফল তৈরি এবং এমপিওভূক্ত করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
এ ব্যাপারে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরে আলম সিদ্দিকী গোপনে নিয়োগ সম্পন্নের বিষয়টি স্বীকার করেন বলেন, নিয়োগে আদালতে নিষেধাজ্ঞা আছে এটা আমার জানা নেই। গত ৫ এপ্রিল কুড়িগ্রাম আলিয়া মাদরাসায় পরীক্ষা দিয়ে চূড়ান্ত হয়েছি। পরীক্ষা কতটার সময় অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি বিষয়টি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অপর দুই নিয়োগপ্রাপ্ত সাধবী আক্তার এবং নাফসীন নাহারকে ফোন দিলে তারা ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন।
কাঁঠালবাড়ী নুরুল্লাহ ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসার নিয়োগকালীন অধ্যক্ষ হারুনুর রশিদ বলেন, নিয়োগের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। সব সভাপতি সাহেব জানেন। আপনি তাকেই ফোন দেন।
এ ব্যাপারে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আফতাব উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘ আমি নিয়োগ কমিটির কোনো সদস্য না। আমার কাছে কোন এ বিষয়ে একটি ফাইল আজ আসবে, আসলে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিয়োগ সম্পন্ন করার সুযোগ নেই। জালিয়াতিসহ অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষ দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।