শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০২৪

পদ্মার চরে মধ্যরাতে অভিযান, ৮টি স্কেভেটর ও ২৩টি ট্রাক জব্দ

জব্দ ট্রাক ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত প্রশাসনের

ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে পদ্মায় জেগে উঠা চরে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহা উৎসব চলছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে মধ্যরাতে ভ্রাম্যমান আদালতের অভিযান চালানো হয়। সে সময় ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সবকিছু ফেলে পালিয়ে যায় বালুদস্যুরা। এসময় ৮টি স্কেভেটর ও ২৩টি ছোট-বড় ডাম ট্রাক জব্দ করা হয়। বালু দস্যুদের কঠোর শাস্তির আওতায় এনে স্থায়ীভাবে বালু কাটার হাত থেকে রক্ষা পেতে চায় স্থানীয়রা। বালু ও মাটিকাটা চক্রদের ঠেকাতে কঠোর আছে প্রশাসন। এছাড়া জব্দ ট্রাক ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের ধলার মোড় এলাকায় শহর রক্ষা বাধেঁর তীর ঘেষে পদ্মা নদী থেকে রাতের আধারে বালু উত্তোলন করে একদল প্রভাবশালী বালু দস্যুরা। বাধঁ এলাকার প্রায় কয়েক কিলোমিটার জুরে পদ্মার জেগে উঠা চরে এই বালু কেটে বিক্রি করছে অনেকে। অবৈধ বালু উত্তোলন ঠেকাতে প্রশাসন বিভিন্ন কর্র্মসূচী হাতে নিলেও অসাদু বালু ব্যবসায়ীদের থামাতে পারছে না প্রশাসন।
রাত ৯টার পর থেকে স্কেভেটর বা বেকু বসিয়ে সারা রাত বালু কেটে বিক্রি করে তারা। ছোট বড় ডাম ট্রাকে মাটি, ভরাট বালু বোঝায় করে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে এই চক্র। প্রতিবছরই বর্ষায় পলি জমে চর পড়ে নদীতে। বিভিন্ন জায়গায় জেগে উঠা চরে বাদাম, ভুট্টা, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ করে জমির মালিকেরা। কিন্তু এই এলাকায় জমির মালিক কে ভয়ভীতি ও লোভ দেখিয়ে বালুর ব্যবসা করে একটি চক্র। এই চক্রের কাছে অসহায় স্থানীয়রা, তাই কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
স্থানীয় বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, আগে চর ছিল, তার পর ভাঙল, তারপর আবার চর জাগলো। এখন বর্ষায় ভড়ে আর প্রতিবছরই বালু কাটে। এ জমিতে বাদাম, ভুট্টা, ধান হয়। ঘাস কাটতে নদীর ওপারে যেতে হয়, এখানে মাটি না কাটলে এখান থেকেই ঘাট কাটতে পারতাম। গরিম মানুষ তাই ওপারে গিয়ে ঘাস কেটে আনতে হয়। আর এগুলো কাটার কারণে চলাচলেও সমস্যা হয়। পুলিশ এসে দাবড়ায় কয়েকদিন পরে আবার কাটে।
অপর স্থানীয় বাসিন্দা ছাত্তার শেখ জানান, বাধের কিনারে ওই পাশেই আমার বাড়ি ছিলো এখন জাগছে ২/১ বছর পরপরই কাটে। এখন জমিওয়ালা যদি মাটি বিক্রি করে কি করবেন? আইন যত হয়েছে তার অপব্যবহার হয়েছে, এর বেশির ভাগ টাকা বিভিন্ন লোক নেয়। তাদের টাকা দিলে কাটে, টাকা না দিলে বন্ধ করে দেয়। এই ভাবেই তো চলছে।
নদীপাড়ের দেলোয়ার জানান, আমরা বালু কাটার কথা কয়ে মার খাবনি। দেখেন না এলাকা জুরে কত বেকু। এখন ধরছে কয়েক দিন পরে আবার চালাবে। আমরা চাই স্থায়ী ভাবে বালু কাটা বন্ধ হোক।
বুধবার গভীর রাতে জেলা প্রশাসনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মুজিবুল ইসলাম এর নেতৃত্বে এ সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ৮টি স্কেভেটর ও ২৩টি ডামট্রাক জব্দ করা হয়। ফেলে যাওয়া বালু বোঝায় ও খালি ট্রাক এবং স্কেভেটর গুলো পুলিশের পাহাড়ায় রেখে গেছে প্রশাসন। সেই ট্রাক ও স্কেভেটর গুলো প্রায় ১ কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে আছে। এলাকার ফসলী জমি, শহর রক্ষা বাধ ঝুকি মুক্ত রাখতে প্রশাসনের এমন অভিযানে এলাকাবাসী খুশি হলেও স্থায়ীভাবে বালু কাটা বন্ধের দাবী এলাকাবাসীর।
অপর বাসিন্দা হালিম শেখ জানান, সরকার পুরা এলাকা বাধ দিছে। যেভাবে কাটছে সামনে বর্র্ষ আসলে বাধ কি হবে আল্লাহ জানে। বালু কাটার সময় বাধেঁর ঢালুর বোল্ডার, জিও ব্যাগের বস্তা সহ উঠায় ফেলায় নিয়ে যায়। এগুলো চর জেগে সোনার জমি হয়, ভুট্টা হয়, সরিষা হয়, ধান হয় কতছিুর চাষ হয়। আর সেগুলো যদি ভাঙ্গে যায় কেমন লাগে! চরে এই বালি কাটা বন্ধ হোক। এখানে একটা পার্কের মত তৈরি করে দিক। প্রশাসন জানে প্রতিবছর বিভিন্ন সময় ৪টা করে মেলা হয়। এতে খুব সুন্দর হবে।
কালকে রাতে পুলিশে দাবুর দিছে সবাই এগুলো ফেলে পালাইচে। শুধু ঈদের দিন বাদ দিছে। আর প্রতিদিন রাত ৯ টা থেকে শুরু করে কাটা। সারা রাত শো শো করে গাড়ি চলে, শব্দ করে হর্র্ণ দেয়, ঘরে ঘুমানো যায়না। মাইকিং করে এমপি স্যার, ডিসি স্যার মাটি কাটতে সবাইকে নিষেধ করেছে।
অবৈধ বালু নেয়ার বিষয়ে ট্রাক চালক কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, দিনে ডাম ট্রাক চলা সমস্যা তাই রাতে চলে। এখান থেকে প্রতি ট্রাক ভরাট বালু সাড়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা নেয়। প্রতি রাতে ৭ থেকে ৮ টিপ মাল নেয়। এই টাকা জমি ওয়ালা, বালুর কন্টেক্টর পায় তারা বেকু দিয়ে কেটে দেয়। আমরা বালু নিতে আসছি গতকালই প্রথম। আমরা জানিনা যে এগুলোতে সদস্যা।
ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিন্টু জানান, ধলার মোড়ের এই এলাকাটিতে কিছু অসাদু বালু ব্যবসায়ীদের সাথে কেউ পেরে উঠছে না। রাতের আধারে বালু কাটে তারা। বালু কাটার কারণে নদীর তীর রক্ষা বাধ বা শহর রক্ষা বাধটি হুমকির মুখে পড়েছে। পদ্মার চরের এই এলাকাটিতে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয়দের একটি ইকো পার্ক করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু প্রতিবছর এখানে বালু কাটায় তা আর হয়ে উঠছে না। এভাবে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলে অসাদু ব্যবসায়ীদের হাত থেকে এই বাধটিও রক্ষা পারে আবার ভালো কিছু করাও যাবে।
জেলা প্রশাসক, মো: কামরুল আহসান তালুকদার, জানান, বালু চুরি ঠেকাতে প্রশাসন কঠর ব্যবস্থা গ্রহন করতে যাচ্ছে। এখন থেকে দিনে ও রাতে অভিযান অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া যে ট্রাক গুলো জব্দ করা হয়েছে সেগুলোকে ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। এছাড়া জেলার সকল স্কেভেটর মালিকদের সতর্র্ক করা হবে তাদের স্কেভেটর অবৈধ কাজে ব্যবহৃত হলে সেগুলো জব্দ করে ডাম্পিং করা হবে। ইতি মধ্যে শহররক্ষা বাধের ঝুকির বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্র্মকর্তাদের সেখানে পরিদর্র্শন করতে বলা হয়েছে। বাধের ক্ষতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে জব্দ পরিবহন গুলোকে আলামত হিসাবে থানায় আনার বিষয়ে বলা হয়েছে।
সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর রক্ষা বাধঁ রক্ষা ও অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের মাধ্যমে মানুষের ফসলী জমি ও বসতবাড়ী নদীর ভাঙ্গন থেকে রেহায় পাক স্থানীয় প্রশাসনের কাছে এমনটি প্রত্যাশা সকলের।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
আরও
- Advertisement -spot_img