শরীয়তপুর প্রতিনিধি :
শরীয়তপুরের জাজিরায় লতিফ মোড়ল (৩২) নামের এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধারের ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে তার পরিবার ও এলাকাবাসী ।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিকাল ৫টার সময় উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের ইয়াসিন আকন কান্দি গ্রামে এ মানববন্ধন করা হয় । মানববন্ধনে লতিফ মোড়লের আত্মহননের পেছনে প্রকৃত অপরাধীদের সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানানো হয়।
মানববন্ধনে সাবেক ইউপি সদস্য কিনাই শেখ বলেন, লতিফ মোড়লের মৃত্যুর পেছনে কারা জড়িত, তা যথাযথ তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আমরা এই মানববন্ধন ও শোক র্যালি করেছি। দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেনো সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের বের করে এটাই আমাদের আজকের মানববন্ধনের মূল দাবি।
স্থানীয় বাসিন্দা ছোবাহান আকন বলেন, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মাঝিরঘাটের সালাম ফরাজি আমাকে ফোন দিয়ে বলে যে আমরা লতিফ মোড়লকে আটকিয়ে রেখেছি। আপনারা এসে নিয়ে যান। বিষয়টি আমি লতিফ মোড়লের পরিবারকে জানালে তারা লতিফকে ছাড়িয়ে আনার জন্য বের হলে সালাম ফরাজি আমাকে আবার ফোন দিয়ে বলে যে আমরা লতিফ মোড়লকে ছেড়ে দিয়েছি। তার ঘন্টা দুয়েক পরে লতিফের ছোট ভাই সজিব মোড়ল আমকে জানায় যে লতিফের লাশ দড়িকান্দির একটি আমবাগানের গাছের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। এর পরই আমি সালাম ফরাজিকে মুঠোফোনে কল দেই। তাকে জিজ্ঞেস করি লতিফ মোড়লকে মেরে ফেললি কেনো। সালাম ফরাজি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কল কেটে দেয়।
নিহত লতিফ মোড়লের পিতা শামসু মোড়ল বলেন, আমার ছেলের সাথে একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরেও মেয়েটি আমার ছেলেকে প্রায়ই ফোন দিত। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়েটির সাথে দেখা করতে গেলে মেয়েটির স্বামী সালাম ফরাজি আমার ছেলেকে আটকিয়ে মারধর করে। এরপর রাত ১০ টার সময় আমার ছেলের লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় পাই। আমার ছেলেকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে। প্রশাসনের কাছে আমার একটাই দাবী যারা আর ছেলেকে হত্যা করে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছে তদন্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
উল্লেখ্য, গত ১২এপ্রিল রাত ১০টার সময় উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের দড়িকান্দি এলাকার একটি আমবাগানের গাছে রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় লতিফ মোড়লের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে থানা পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে।
জানা যায়, লতিফ মোড়লের সাথে একই এলাকার নুরুল ইসলামের মেয়ে সালমা বেগমের সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রায় আট বছর আগে সালমা বেগমের বিয়ে হয়ে গেলেও তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ চলতে থাকে। শুক্রবার সন্ধ্যায় মেয়েটির সাথে দেখা করতে গেলে স্থানীয় ও মেয়েটির শশুরবাড়ির লোকজন লতিফ মোড়লকে আটকে রেখে মারধর করতে থাকে। বিষয়টি পরিবারকে খবর দিলে তারা যাওয়ার আগেই লতিফ মোড়লকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
এরপর থেকেই লতিফ মোড়লের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে রাত ১০ টার দিকে উপজেলার দড়িকান্দি এলাকার একটি আমবাগানে লতিফ মোড়লের ঝুলন্ত মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীরা তার পরিবার ও থানা পুলিশকে খবর দেয়।
এ বিষয়ে নিহত লতিফ মোড়লের কথিত প্রেমিকার স্বামী সালাম ফরাজীর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর সাথে দেখা করতে আসলে আমরা তাকে কিছুটা মারধর করে ছেড়ে দিয়েছি। এরপর কি হয়েছে তা আমার জানা নেই।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।