রাজু আহাম্মেদ, কুড়িগ্রাম:
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের সংবাদ সম্মেলন
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও কুড়িগ্রাম-৪ আসনের সাবেক এমপি জাকির হোসেন দাবি করেছেন, ‘বর্তমান এমপি নেপথ্যে থেকে আমাকে খুন করার পরিকল্পনা করছে। আমাদের এমপি আর আলম (রাজিবপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান) দীর্ঘদিন থাকি ষড়যন্ত্র করতেছে। জাকিরকে মারি ফেললেই ওদের রাস্তাটা পরিচ্ছন্ন হবে।’
শনিবার (১৩ জুলাই) রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কুড়িগ্রাম-৪ আসনের এমপি বিপ্লব হাসান পলাশকে ইঙ্গিত করে এমন গুরুতর অভিযোগ করেন ওই আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকির হোসেন। এ সময় নিজের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের তোলা বিভিন্ন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন তিনি।
এরপর সকালে জাকির হোসেনের সংবাদ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তার ও বর্তমান এমপি বিপ্লব হাসান পলাশের সমর্থকেরা মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে উপজেলা শহরে সবখানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইউএনও ও ওসিকে মাঠে তৎপর হতে দেখা যায়। পরে পুলিশি প্রহরায় উভয় পক্ষ মিছিল-সমাবেশ করে।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল ইসলাম মিনু, রফিকুল ইসলাম শাহিন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবিদ শাহনেওয়াজ তুহিনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকিরের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে লিখিত বক্তব্যে আবিদ শাহনেওয়াজ তুহিন সাবেক এমপির বিরুদ্ধে জমি দখলসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেন।
ওই আওয়ামী লীগ নেতাদের ‘দলছুট ও আইসিইউ’ নেতা উল্লেখ করে সাবেক প্রতিমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘তুহিন আর মিনু বুঝতেছে না। আমি খুন হলে মামলা হবে এদের নামে। আমার পরিবার বলবে, এই তুহিন তো আব্বার শত্রু, মিনু তো আব্বার শত্রু। তখন মামলা হবে এদের নামে। কিন্তু খুন করাবে আমার এমপি মহোদয়। এভাবে আমাদের আওয়ামী লীগের এমপি নেপথ্যে থেকে আওয়ামী লীগটারে ভেঙে দিয়ে তার একটা দুর্গ তৈরি করার চেষ্টা করতেছে।’
বর্তমান এমপির উদ্দেশে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এটা কোনও দিনও এই রৌমারীতে সম্ভব নয়। কারণ ওর (এমপি পলাশের) পায়ের তলে মাটি নাই। ওদের বসার কোনও জায়গা নাই। ভাড়া করে বসতে হবে, এটাই বাস্তবতা। যার কারণে জাকিরকে নিয়ে ওদের এত সমালোচনা।’
নিজের বিরুদ্ধে ওঠা সকল অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে তার প্রতিবাদ ও নিন্দা জানান সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, সরকারি বিভিন্ন এজেন্সি ও সাংবাদিকদের বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই করে বাস্তব অবস্থা জানার আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘আপনারা সত্যটা জাতির সামনে তুলে ধরেন। না হলে এরা আমাকে রাজনৈতিকভাবে মেরে ফেলছে, সামাজিকভাবেও মেরে ফেলতে চায়। যেকোনও সময় আমার জীবনটাই ওরা ধ্বংস করে দিতে পারে।’
২০১৬ সালে উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মাহবুবুল আলম জুয়েল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বর্তমান এমপি পলাশের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে সাবেক প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এত বছরেও একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হত্যার ক্লু বের করতে পারেনি পুলিশ। এই পুলিশরা সেদিনও পলাশকে সহযোগিতা করেছে। এজাহার পরিবর্তন করা হয়েছে। আজ কয়েকজন দালালকে নিয়ে এই এমপি নেপথ্যে থেকে ওই জুয়েলকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে এবার আমাকেও হয়তোবা সপরিবারে হত্যা করার পরিকল্পনা করতেছে। সেদিন যেমন জুয়েল হত্যায় উনি (এমপি পলাশ) বাঁচি গেইছেন, আজকে জাকির হত্যা করেও তিনি বাঁচতে চান। এটা হলো তার পূর্বপরিকল্পনা।’
বর্তমান এমপির বিরুদ্ধে হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগ তুললেও এই মুহূর্তে আইনি কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাকির। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় হলে দেখা যাবে। ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হলে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবো।’
সাবেক প্রতিমন্ত্রীর এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই আসনের বর্তমান এমপি বিপ্লব হাসান পলাশ বলেন, ‘উনি যে অভিযোগ তুলেছেন তার ব্যাখ্যা ওনাকে দিতে হবে। তার (জাকির হোসেন) বিরুদ্ধে জমি দখল, মানুষের কাছ থেকে টাকা নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠছে। আপনারা সরেজমিন দেখেন। কিছুদিন আগে অস্ত্র দেখিয়ে বাড়ির পাশের জমি দখল করতে গেলো। এগুলো নিয়ে অনেক কথা বললো মানুষ। আমি আসলে বিষয়গুলো নিয়ে বিব্রত। যেহেতু আমি আওয়ামী লীগের এমপি, উনি আওয়ামী লীগের সভাপতি। এটা আসলে হওয়া উচিত না। আমি আর কিছু বলতে চাই না।’
হত্যার পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এটা যেহেতু উনি বলেছেন, তার ব্যাখ্যা উনি দিবেন। উনি সব সময় এভাবে দলকে বিব্রত করেন। সব কথা ওনার বিশ্বাস করার মতো না।’ বঙ্গবন্ধুকে ‘জাহান্নামে পাঠানো’ নিয়ে বক্তব্য, জমি দখলসহ নানাবিধ অভিযোগে সাবেক প্রতিমন্ত্রীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি বলেও জানান এমপি পলাশ।