মো: আব্দুর রহিম, শরীয়তপুর প্রতিনিধিঃ
শরীয়তপুরের জাজিরায় গর্ভধারণ ছাড়াই দুধ দিচ্ছে ১৮ মাস বয়সী একটি বাছুর। উপজেলার পালেরচর ইউনিয়নের মধু মাদবর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন শরীফের বকনা বাছুরটি গত দুই মাস যাবৎ ২ থেকে ৩ লিটার করে দুধ দিচ্ছে। এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে বাছুরটি দেখতে উৎসুক জনতা হুমায়ুন শরীফের বাড়িতে ভিড় করছেন। এছাড়াও অনেকে আবার সেই দুধ মানত করে কিনে নিচ্ছেন।
এ বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, এমন ঘটনা দুর্লভ হলেও অস্বাভাবিক কোন বিষয় নয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার বরাত দিয়ে তারা বলেন, মূলত কোন পশুর শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার দেখা দিলে বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দুধ দিতে পারে। আর এ দুধ সেবনে কোন ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, হুমায়ুন শরীফ দম্পতি দেশি জাতের গরু লালন পালন করেন। তার একটি গাভী গত সাড়ে তিন বছরে পর্যায়ক্রমে দুটি বাচ্চা প্রসব করেছে। আগের একটি বাছুর বড় করে বিক্রিও করেছেন। এবার কোরবানি ঈদে গাভীটিকেও বিক্রি করে দিয়েছেন। তবে শেষবারের বকনা বাছুরটি একদমই ব্যতিক্রম। বয়স প্রায় ১৮ মাসেও হিটে না আসায় বাছুরটি গর্ভধারণের সময়ও হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে প্রতিদিনই দুই থেকে তিন লিটার দুধ দিচ্ছে গর্ভধারণ বা বাচ্চা প্রসব ছাড়াই।
প্রায় দুইমাস আগে হুমায়ুন শরীফের স্ত্রী ১৮ মাস বয়সী বাছুরটিকে খাবার খাওয়ানোর জন্য গেলে গরুটির দুধের বাঁট ফোলা দেখে ধারণা করেন, এর বাঁটে দুধ জমেছে। তিনি তাৎক্ষণিক গরুটির স্তন থেকে দুধ সংগ্রহ করেন। প্রথম কয়েক দিন আধা কেজি দুধ দেয়। সেগুলো তারা পদ্মা নদীতে ফেলে দিতেন। এখন দুধের পরিমাণ বেড়েছে। প্রতিদিন দুই থেকে তিন লিটার দুধ দিচ্ছে।
এদিকে বকনা বাছুর বাচ্চা ছাড়া দুধ দেয়ার এমন ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। দূরদূরান্ত থেকে খালি বোতল নিয়ে লোকজন এসে ভীর জমাচ্ছেন হুমায়ুন শরীফের বাড়িতে। কেউ কেউ মানত করে ১০০-৫০০ টাকা দিয়ে কিনে নিচ্ছেন দুধ। আবার ১০০ গ্রাম দুধের জন্য হাজার টাকাও দিচ্ছেন অনেকে।
বিষয়টি নিয়ে গরুর মালিক হুমায়ুন শরীফের সাথে কথা বলতে গেলে তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম এসে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে নিষেধ করেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘এগুলো দিয়ে আপনারা কি করবেন?আপনাদের আমি ডেকেছি? আপনারা চলে যান।’
হুমায়ুন শরীফের প্রতিবেশী ফারুক শরীফ বলেন,”গাভীর বাছুর মারা গেলে সেই গাভী দুধ দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আর এখানের বাছুর ছাড়াই বকনা বাছুর দুধ দিচ্ছে। বিষয়টি ব্যতিক্রম। আমরা শুনেছি গরুর মালিকের স্ত্রীর সাথে নাকি আধ্যাত্মিক কিছু আছে। তিনি নাকি স্বপ্নে কি দেখেছেন। তারপর থেকেই বাছুরটিও দুধ দেয়া শুরু করেছে।”
এবিষয়ে পালেরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন ফরাজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি শুনেছি হুমায়ুন শরীফের একটি বকনা বাছুর দুধ দিচ্ছে। তবে তা নিয়ে কুসংস্কার ছড়ানো হচ্ছে। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।”
জানতে চাইলে শরীয়তপুর জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো: আবু বকর সিদ্দিক বলেন,”পশু প্রাণির হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে বাচ্চা প্রসব ছাড়াই দুধ দিতে পারে। এটি কোন রোগ নয়। স্বাভাবিক বিষয়।”