মঙ্গলবার, অক্টোবর ৮, ২০২৪

জিম্মিদসা থেকে ফিরে আসা নাবিক তারেকুলের বাড়িতে আনন্দের বন্যা 

ফরিদপুর প্রতিনিধিঃ

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ী এলেন জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর থার্ড অফিসার নাবিক ফরিদপুরের তারেকুল ইসলাম।  প্রিয়জন মুক্তি পেয়ে বাড়িতে আসায় পরিবার জুড়েদদ বলছে আনন্দের বন্যা। 

জাহাজের ২৩ নাবিক ১ মাস জলদস্যুদের হাতে আটকে থাকার পর নানা পরিক্রমায় মুক্তি শেষে আবার সাগর পথে ৬৫ দিন পর বাড়ি এলেন ফরিদপুরের নাবিক তারেকুল ইসলাম। 

বুধবার ভোর পৌনে ৬টায় ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ছকড়িকান্দি বাড়িতে এসে পৌছাই তারেকুল। জিম্মিদসা থেকে মুক্ত সন্তান কে কাছে পেয়ে খুশিতে বাবা-মায়ে বুক ভোরে উঠে। দেড় বছরের মেয়েটিও বাবা কে কাছে পেয়ে কোল থেকে নামছে না আর শিশুটি। পরিবারের সকলের মাঝে যেন আজ ঈদের আনন্দ।  তাকে দেখতে ভীড় করছে স্বজন ও এলাকাবাসী।

তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, গত ১২ মার্চ দস্যুদের হাতে ছেলে অপহরনের পর থেকে চরম উৎকন্টায় দিন পার হয়েছে তাদের।  ছেলেকে আজ কাছে পেয়ে সকল কষ্ট ভুলে গিয়ে বুকটা হালকা হয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ যেন ঐ ২৩ নাবিকের ভাগ্যের দিকে চেয়েছিল। সুস্থভাবে আজ বাড়ি ফিরে আসায় তারেকুলের বাবা সরকারসহ সকল মহলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

তারেকুলের মা হাসিনা বেগম জানান, ডাকাতদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ছেলে আজ বাড়িতে পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। জলদস্যুদের হাতে আটকের  পর ছেলের জন্য নফল রোজা, মানদ আর দোয়া করে কান্নাকাটি করেছে তারা। ছেলে কে কাছে পেয়ে আজ তাদের ঈদের দিন ও খুশির দিন ।

জলদস্যুদের হাত থেকে জীবিত ফিরতে পারবো কিনা এমন দুশ্চিন্তা আর ভয়ের কথা স্মরণ করে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজের নাবিক তারেকুল তার অভিজ্ঞাতার কথা তুলে ধরেন, ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে চলার পথে হঠাৎ একটা ফিসিং বোর্ড দেখে। জাহাজটি যথাযথ ভাবে পরিচালনা করলেও ফিসিং বোর্ড থেকে দেখে স্প্রিড বোর্ডে করে কয়েকজন এসে তাদের জাহাজে উঠে পড়ে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। অস্ত্রের মুখে একে একে সবাই কে জিম্মি করে তারা। মেশিনগান, এ.কে.ফোর্টি সেভেন, রকেট লান্সারের মত ভাড়ি অস্ত্র নিয়ে তাদের জাহাজ নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। 

তারপর অস্ত্রের মুখে এক একটি দিন পার করে তারা। প্রথমে খাবার সংকট হতে থাকে। তবে পানির সংকট বেশি দেখা দেয়। কারন প্রথম দিকে দস্যুরা তাদের খাবারে ভাগ বসায়। পরে অবশ্য দস্যুরা অপহৃত নাবিকদের সুস্থ রেখে মুক্তিপনের আশায় নিজেরা বাইরে থেকে খাবার এনে খাই, এমনকি কিছু তাদেরও দেয়। 

সেই দুর্বিষহ দিন গুলো খুবই কঠিন ছিলো যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না বলেও জানায় তারেকুল।  খাবারের কস্ট বা শারীরিক নির্যাতন না করলেও মানসিক কস্ট ছিল চরমে। 

আজ বাড়ি ফিরে বাবা-মা আর সন্তানের মাঝে এসে নতুন জীবন পেলো সে, এমনটিই বলেন তারেকুল।

পরিবারের সকলের মুখে এখন হাসি। সকলে এখন অনেক খুশি। তারেকুল বাড়ি এসেছে খবর পেয়ে বাড়িতে আসতে শুরু করেছে প্রতিবেশি ও আত্মীয়স্বজন।  তাকে আজ কাছে পেয়ে সকলে আনন্দিত।

প্রসঙ্গ, মোজাম্বিক থেকে কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে সোমালিয়া উপকূলের কাছে গত ১২ মার্চ জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। উপকূলের ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে অস্ত্রের মুখে জাহাজ ও ২৩ নাবিককে জিম্মি করে জলদস্যুরা। এরপর ৩৩ দিন কাটে নানা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে। গত ১৪ এপ্রিল মুক্তিপণ দিয়ে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হয় ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
আরও
- Advertisement -spot_img