মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, পাইকগাছা :
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে খুলনার পাইকগাছায় প্রতীক বরাদ্দের সাথে সাথে জমে উঠেছে প্রচার-প্রচারনা। সোমবার প্রতীক পেয়েই প্রতিদ্বন্দি প্রার্থীরা যার যার এলাকা থেকে জোর প্রচারনা শুরু করেছেন।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদে এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নজর কাড়ছেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস। চিংড়ি মাছ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন তিনি। নিরহংকারী ও সদা হ্যাস্যোজ্জ্বল ক্লিন ইমেজের মানুষ হিসেবে দল-মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে সমাদর পাচ্ছেন তিনি।
সোমবার প্রতীক পেয়েই উপজেলার প্রবেশদ্বার শাপলা চত্ত্বর থেকে নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সাথে পায়ে হেঁটে নির্বাচনী এলাকায় প্রবেশ করলে সহস্রাধিক মানুষ যোগদেন তার সাথে। এসময় সড়কে কিছুক্ষণের জন্য রীতিমত জট লেগে যায়।
এরপর পায়ে হেঁটে কপিলমুনিতে পৌছান । পীর জাফর আউলিয়ার মাজার জিয়ারত ও কপিলেশ্বরী কালী মন্দিরে প্রার্থনার মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। কপিলমুনি বাজারে গণসংযোগ শেষে পথ সডায় বক্তব্য রাখেন, তিনি বলেন, , আমার ৩৬ বছরের রাজনৈতিক জীবনে পরিবার পরিজন, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রেখে আপনাদের মাঝে থাকার চেষ্টা করেছি। পথ চলার মাঝে কখন কেহ যদি আমার কথায় বিন্দুমাত্র কষ্ট পেয়ে থাকেন আমাকে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমি যদি চেয়ারম্যান হয়ে আপনাদের মাঝে কখন আসতে পারি। তখন ও শুধুমাত্র আনন্দ মোহন বিশ্বাস হিসেবে থাকতে চাই।তিনি আরও বলেন, আজ আপনারা যে সন্মান দেখিয়ে এখানে হাজির হয়েছেন তার জন্য আমি আপনাদের কাছে চিরঋণী হয়ে গেলাম। পাইকগাছা উপজেলার সকল শ্রেণী পেশার মানুষ আমার অত্যান্ত আপনজন। তাদের অনুপ্রেরণায় আজ আমি আনন্দ মোহন বিশ্বাস। আমার প্রতীক চিংড়ী মাছ। ২৯ মে নির্বাচনে আপনারা আপনাদের মুল্যবান ভোটটি চিংড়ী প্রতীকে দিয়ে আমাকে জয়যুক্ত করার জন্য আপনাদের প্রতি বিনয়ের সাথে অনুরোধ জানাচ্ছি।
বিকেলে নিজ জন্মস্থান কাশিমনগর বাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শেষ করে পৌছান শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত আরেক বাজার মানিকতলায়। সেখানে পৌছালে সাধারণ মানুষের মধ্যে তাকে নিয়ে তৈরি হয় এক আবেগঘণ পরিবেশ।
মূলত নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে তিনি উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌছে নিজের প্রার্থীতার বিষয়টি জানান দেন। দোয়া ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন, সবার কাছে।
আসন্ন নির্বাচনে উপজেলা থেকে মোট ৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষ দিন রবিবার নিজের শারীরিক অসুস্থ্যতার কথা জানিয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্তে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার ইকবাল মন্টু। মূলত এরপর থেকে ভোটের নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে না আসায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এবার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন কিংবা প্রতীক দেয়নি। বিধায়, আওয়ামীলীগ থেকে একাধিক প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস ছাড়াও সরকার দলের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ কামরুল হাসান টিপু (মোটরসাইকেল), উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাড. আবুল কালাম আজাদ (দোয়াত-কলম)। এছাড়া সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কৃষ্ণ পদ মন্ডল (আনারস), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ্যাড. স.ম বাবর আলীর ছেলে স.ম শিবলী নোমানী রানা (কাপ পিরিচ ), মো: আসাদুল বিশ্বাস হেলিকপ্টার)|
ধারণা করা হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে মূলত লড়াই হবে ত্রি-মুখী। আনন্দ মোহন বিশ্বাস, আবুল কালাম আজাদ ও শেখ কামরুল হাসান টিপুর মধ্যে প্রতিদ্বন্দিতার আভাস দিচ্ছেন দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটাররা। আর তারা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থী।
নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জাতীয় নির্বাচনে প্রতীক মূল ফ্যাক্ট হলেও স্থানীয় সরকার পরিষদ নির্বাচনে রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি ব্যক্তি ইমেজ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সেক্ষেত্রে আনন্দ মোহন বিশ্বাসকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন রাজনৈতিক বোদ্দারা। রাজনৈতিক পরিচয়ের পাশাপাশি গত নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বিবেচনায় সনাতন ধর্মাবলম্বী ভোটার উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত বেশি ছিল। সে হিসেবে তাদের পছন্দের প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন আনন্দ মোহন বিশ্বাস।
পাইকগাছা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় সর্বশেষ ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্যানুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯০৮জন। যার মধ্যে পুরুষ ১লাখ ২০হাজার ৮৯৫ জন ও নারী ভোটারের সংখ্যা ১লাখ ১৮ হাজার ১৩ জন। যার একটা বড় অংশ প্রায় ৭৬ হাজার ভোটার সনাতন ধর্মাবলম্বী।
আনন্দ মোহন বিশ্বাস শৈশবে ছাত্র রাজনীতির পাশাপাশি স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সঞ্চয়ী করে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আজীবন সদালাপী, শিক্ষানুরাগী ও সমাজ হিতৈষী নানা কাজে সম্পৃক্ততার দরুণ জনপদে সাদা মানুষ হিসেবে একটি পরিচিত নাম। রাজনৈতিকভাবে তিনি বর্তমানে পাইকগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এর আগে ২০১৯ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক, ২০১৪-১৮ সালের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ২০০৪-১৩ সালে প্রচার সম্পাদক, ২০০২-২০১০ সালে খুলনা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি, ২০০০-২০০৫ সালে পাইকগাছা উরো ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৯৬-১৯৯৮ সালে উপজেলা ছাত্রীগের সহ-সম্পাদক, ১৯৯৯ সালে উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য, ১৯৯০-১৯৯৫ সালে কপিলমুনি কলেজ ছাত্র লীগের সভাপতি, ১৯৮৯ সালে কপিলমুনি কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও এর আগে ১৯৮৮ সালে কপিলমুনি কলেজ ছাত্রীলীগের সদস্য হিসেবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন ও দলের দু:সময়ে নিজের অবস্থান থেকে দলকে সংগঠিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এছাড়া রাজনীতির পাশাপাশি বিভিন্ন সময় তিনি নানা সামাজিক, শিক্ষা, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত থেকে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেন।
বর্তমানে তিনি পাইকগছা উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সদস্য, লোকনাথ ব্রক্ষ্মচারী শান্তি নিকেতনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, শ্রী শ্রী কপিলেশ্বরী কালী মন্দিরের সহ-সভাপতি, কাশিমনগর সার্ব্বজনীন পূজা মন্দির কমিটির সভাপতি, কাশিমনগর মহা নামযজ্ঞ কমিটির সভাপতি ও কপিলমুনি বেদ মন্দির কমিটির উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
শিক্ষা ক্ষেত্রে আনন্দ মোহন বিশ্বাস বর্তমানে কপিলমুনি কলেজ পরিচালনা পরিষদ ও হরিঢালী ইউনিয়ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি কে,আর,মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছাড়াও পুটিমারী স্বল্প ব্যয়ী প্রাথমিক বিদ্যায়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া সামাজিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পাইকগাছা থানা পুলিশিং ফোরামের সহ-সভাপতি, কপিলমুনি ইউনিয়ন পুলিশিং ফোরামের সহ-সভাপতি, কপিলমুনি নিরাপদ সড়ক চাইয়ের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, কপিলমুনি ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাবেক সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন সামাজিক, সাংষ্কৃতিক, ধর্মীয় কর্মকান্ডে উপস্থিত থেকে ভোটারদের দোয়া, সমর্থন ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করছেন। ভোটাররাও তার প্রতিটি কর্মকান্ডে নিজেদেরকে সর্বোচ্চ উজাড় করে তাকে উৎসাহ ও অনুপ্রাণিত করছেন। সর্বশেষ প্রতীক বরাদ্দের পর দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি দল-মত, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের উন্মাদনা জানান দিচ্ছে শুভ আগামীর।