সোমবার, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪

উদ্বোধনের তিন বছরেও নির্মাণ হয়নি কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের ভবন

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেই সীমাবদ্ধ

মোঃ রফিকুল ইসলাম খান, পাইকগাছা :
কপিলমুনিতে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের তিন বছর পার হলেও এখনো তৈরী হয়নি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন।
২০২০ সালে বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ও ইতিহাস সংরক্ষণে সারাদেশে ৫টি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ নিলে সাবেক সাংসদ আক্তারুজ্জামান বাবু, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব তপন ঘোষ, জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব ইউসুফ হারুনসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় কপিলমুনিতে এর একটি কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়।

ওই সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-এর তত্ত্বাবধানে উপজেলা কানুনগো, সার্ভেয়ার, ইউএলএও এবং স্থানীয় সার্ভেয়াররা কয়েক দফা মাপ-জরিপ করে সরকারি চরভরাটি সীমাণা নির্ধারণ করে সেখানে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণের নির্ধারিত স্থান শনাক্ত করেন।

২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর কপিলমুনি মুক্ত দিবসে এর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ওই দিন মন্ত্রী ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন ঘোষ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ইউসুফ হারুন, স্থানীয় এমপি আক্তারুজ্জামান বাবু উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রীর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কিছু দিন পরেই ওই জায়গা নিজেদের দাবি করে সেখানে কাঁটাতারের ঘেরা-বেড়া দিয়ে দখলে নেয় আধুনিক কপিলমুনির প্রতিষ্ঠাতা রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর ভাই কুঞ্জ বিহারী সাধুর ওয়ারিশরা। এরপর থেকে দফায় দফায় সরকারি পক্ষে সেখানে কখনো লাল পতাকা আবার মালিকপক্ষে কখনো সবুজ পতাকা। এভাবে পতাকা চালাচালিসহ দখল-বেদখলের ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হলে ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর দুপুরে তৎকালীন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের এমপি আক্তারুজ্জামান বাবুসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. শাহরিয়ার হক, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান শিহাব উদ্দীন বুলু, কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্ল্যাহ বাহার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সমীরণ সাধু, সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস, ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়াদ্দার, কাজল কান্তি বিশ্বাস, আ’লীগ নেতা যুগোল কিশোর দে, শেখ ইকবাল হোসেন খোকন, বীর মুক্তিযোদ্ধ শেখ জামাল হোসেন, সালামত উল্যাহসহ স্থানীয় সাংবাদিক, সুধীজনদের নিয়ে উক্ত সম্পত্তির অবৈধ দখলদারদের সাথে ঘটনাস্থলে বসাবসির মাধ্যমে সকল সংকটের সমাধান করেন। যেখানে তারা ঐ সীমানা থেকে তাদের ঘেরা-বেড়া উঠিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কিছু দিনের মধ্যেই এমপিসহ উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অমান্য করে সেখানে টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে তার মধ্যে পাকা ইমারত নির্মাণ সম্পন্ন করেন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ’৮০-এর দশক থেকে প্রথমে কপোতাক্ষের ব্যাপক ভাঙন ও পরবর্তী পর্যায়ে নাব্যতা হ্রাসে কপিলমুনি সদরের কপোতাক্ষের তীর জুড়ে গড়ে ওঠে বিস্তীর্ণ চরভরাটি খাসজমি, যা সরকারের সর্বশেষ মানচিত্রে ১নম্বর খাস খতিয়ানের ৫৯৫ দাগে চিহ্নিত হয়। দাগের পাশেই এস.এ ১৯৩ খতিয়ানে ৪২৫, ৪২৬/৫৯৩ দাগে ননীবালা অধিকারীর খরিদা জমি এবং এস.এ ১৯২ খতিয়ানে ভিপি “ক” তালিকাভূক্ত ০.৪৮ একর জমির অংশবিশেষসহ কুঞ্জ বিহারী সাধুর ওয়ারেশদের রেকর্ডীয় জমি।

প্রসঙ্গত, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধকালীণ ৯ ডিসেম্বর রাজাকারদের অন্যতম প্রধান রাজাকার ঘাঁটি কপিলমুনির রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে মুক্তিযোদ্ধারা আটক করেন ১৫৫ জন রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীকে। রাজাকার ঘাঁটি (মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংসের পথে) থেকে উদ্বৃত বিভিন্ন কাগজপত্র পর্যালোচনায় এ ঘাঁটির রাজাকারদের হাতে লেখা ১ হাজার ৬০১জন শহীদের তালিকা। এছাড়া রাজাকারদের পরবর্তী টার্গেট হিসেবে এলাকার আরো ১হাজার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের তালিকা পাওয়া যায়। ক্যাম্প থেকে এদিন দেয়ালে পেরেকবিদ্ধ সৈয়দ আলী গাজী নামে এক মুক্তিযোদ্ধার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার হয়। আত্মসমর্পণে খবরে সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল মাঠে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষের গণআদালতে এদিন ১৫১ জন রাজাকারের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

খুলনা -৬ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ রশীদুজ্জামান বলেন,মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্সের জায়গাটি নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছে । দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে কাঙ্খিত কপিলমুনি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হবে ।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসীর দাবি সবকিছু সমাধান করে দ্রুত কপিলমুনিতে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা হোক ।

- Advertisement -spot_img
- Advertisement -spot_img
আরও
- Advertisement -spot_img