আসলাম হোসেন, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:
বঙ্গবন্ধুর জন্মভূমিতে অবস্থিত “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়” এ প্রায় ১১,০০০ হাজার শিক্ষার্থী ও ৩৬০ জন শিক্ষক এবং ৪১০ এর অধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীর পদচারণা । ৫৫ একরের এই ক্যাম্পাস, আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও, এই ক্যাম্পাসে প্রতিদিন সৃষ্টি হয় নতুন নতুন সব স্মৃতির গল্প!
ক্যাম্পাস ছোট হওয়ার কারণে পরিচিত মুখগুলোর সাথে সাক্ষাৎ ঘটে নিয়মিত। আর সবসময় প্রাণচঞ্চল থাকে এই ক্যাম্পাস। এরই মাঝে এসেছে রহমতের মাস মাহে রমাদান। রমজানের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি ধাপ হলো সাহরি ও ইফতার। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ইফতার নিয়ে বেশি আগ্রহ দেখান। রমজানে প্রতিদিন সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাঝে ইফতার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। ছোট বড় ইফতারের আসরে মুখরিত হয়ে উঠে বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সেন্ট্রাল মাঠের বিভিন্ন স্থান ও ক্যাফেটারিয়াতে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, হেলিপ্যাড মাঠ, এবং প্রশাসনিক ভবনের প্রাঙ্গণ ছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় জমে উঠে ইফতার উৎসব।
ক্যাম্পাসে সিনিয়র-জুনিয়র সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে সৌহার্দ্য সম্প্রীতির মিল-বন্ধনে প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠে ইফতার আয়োজন। রোজা শুধু মুসলমান ধর্মের ইবাদত হলেও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে থাকেন অন্য সনাতন ধর্মাবলম্বী বন্ধুরাও।
মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের বন্ধু, সিনিয়র বা জুনিয়রদের নিয়ে এই ইফতার আয়োজন করে করে থাকেন। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা ভিত্তিক সংগঠন, সমাজিক সংগঠন এবং সেচ্ছাসেবী সংগঠনও এই ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকে এবং গড়ে তোলে এক মায়ার বাধন।
ইফতারের সময় হলেই ক্যাম্পাসে ছোট ছোট দল তাদের ইফতার সাজাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ইফতার সাজানোর পাশাপাশি চলে আড্ডা-গল্প, হাসি ঠাট্টা। সচরাচর তাদের ইফতারির মধ্যে থাকে ছোলা, মুড়ি, পেঁয়াজু, আলুর চপ, ডিমের চপ, বেগুনি, জিলাপি,আপেল, আঙ্গুর, খেজুর, জুস, এবং শরবতসহ নানা রকমের মৌসুমি ফল। এছাড়া সন্ধ্যার খাবার হিসেবে বিরিয়ানিরও ব্যবস্থা থাকে।
ক্যাম্পাসে ইফতারের অনুভূতি জানিয়ে “ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং” বিভাগের শিক্ষার্থী “আসলাম হোসেন” বলেন, ” আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে ইফতার করার ফলে,পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটা অনেক কম মনে হয়। তাছাড়া নিজেকে একটা পরিবারের সদস্য হিসেবেও মনে হয়। এছাড়া সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো সকল ধর্ম-বর্ণ-জাত-শ্রেণী বিভেদ ভুলে গিয়ে পারস্পরিক সৌহার্দ্য সম্প্রীতি মেলবন্ধনের মধ্য দিয়ে ইফতারে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে আমাদের প্রিয় বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস।
সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী “অর্ক বাগচি” বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ার পরেও সহপাঠী এবং সিনিয়র বড় ভাইদের থেকে প্রতিনিয়ত ইফতারের দাওয়াত পেয়ে খুবই ভালো লাগা কাজ করে, এ যেন ভ্রাতৃত্বের এক বন্ধন। তাছাড়া একসঙ্গে বসে ইফতার করার মধ্য দিয়ে এক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের চিত্র ফুটে ওঠে।
প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে কোনো না কোনো ইফতার পার্টির আয়োজন লেগেই থাকে। বিভাগের ব্যাচমেট, সিনিয়র-জুনিয়র, জেলা ছাত্রকল্যাণ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইফতার পার্টির আয়োজন করে থাকে। এভাবে পুরো রমজান মাসই একের পর এক সংগঠনের ইফতার আয়োজন চলতেই থাকে। এতে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো বশেমুরবিপ্রবি ক্যাম্পাস। বশেমুরবিপ্রবির ইফতার আয়োজনের সবথেকে বড় সৌন্দর্য হলো অসাম্প্রদায়িকতা। অসাম্প্রদায়িক চেতনার বিকাশ এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ধর্মীয় গোঁড়ামীর বিনাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে এই ইফতার আয়োজন।