রাজু আহাম্মেদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় ব্রয়লার খামারে হিট স্ট্রোক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনেই ব্রয়লার খামার গুলোতে মরছে মুরগি। রাতে তাপমাত্রা কিছুটা স্বাভাবিক থাকলেও দিনের বেলায় তাপমাত্রা বাড়ায় খামার গুলোতে হিটস্ট্রোকসহ নানাবিধ সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাপমাত্রা না কমলে বড় ধরণের লোকসানের আশঙ্কা করছেন খামারীরা।
খামার গুলোতে সকাল থেকে মুরগির শুরু হয় হাসঁফাঁস অবস্থা। দুপুর হতে না হতে পরিস্তিতি আরও খারাপের দিকে যায়। খামারীরা অতিরিক্ত তাপমাত্রা থেকে মুরগিকে রক্ষা করার জন্য ফ্যানের বাতাস, স্প্রে, স্যালাইন ও লেবুর পানি দিচ্ছে । তবে কোন কিছুতেই কাজে আসছে না তাদের চেষ্টা। অতিরিক্ত গরমের কারণে মুরগি খাবার কম খাচ্ছে, তাই নির্ধারিত সময়ে ওজনও কম হচ্ছে বলে মনে করছেন এসব খামারী।
খামারে বাচ্চা তোলার প্রথম ২০ দিন কিছুটা রক্ষা করা গেলেও শেষ সপ্তাহে মুরগির হিটস্ট্রোকে সম্ভাবনা বেশি থাকে। আবহাওয়া স্বাভাবিক না হলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বে কুড়িগ্রামের এসব খামারি।
এমনিতেই কোভিট-১৯ পরবর্তীতে কুড়িগ্রামের বেশিরভাগ খামারিই পুঁজি হারিয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছেন। যে ২-১ জন এখনও ব্যক্তি উদ্যোগে উৎপাদন করছেন তারাও কয়েক দফায় ফিড ও বাচ্চার দাম বৃদ্ধিসহ প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বৃদ্ধি হওয়ায় এখন ঝুঁকির মধ্যে আছেন। চলমান দাবদাহ ও বৈরী আবহাওয়ায় খামারিদের কপালে নতুন করে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পরে যাচ্ছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার জোতগোবোর্ধন গ্রামের খামারী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার সেডে বর্তমান ৩ হাজার মুরগি আছে। ইতিমধ্যেই ২০০ টা মুরগি খামারে হিট স্ট্রোকে মারা গেছে। আমার খামারে প্রতিদিন ১০- ১৫ টা মুরগি মারা যাচ্ছে। আমি খামারে মুরগির রক্ষার জন্য লেবুর পানি,স্প্রে, স্যালাইন দিচ্ছি। কিন্তু খুব একটা কাজে আসছে না। আবহাওয়া প্রতিকূলে না আসলে এবার বড় ধরনের লোকসানে পরতে হবে।
নাককাটি এলাকার খামারি মজিদ বানিয়া বলেন, ‘বর্তমান আমার খামারে যে মুরগি আছে অতিরিক্ত গরমের কারণে খাবার কম খাচ্ছে। আর খাবার কম খাওয়ার কারণে ওজনও অনেক কমে গেছে। আমরা খামারিরা বর্তমানে দিশেহারা।’
হরিশ্বর গ্রামের খামারী মেহেদী হাসান মিলন বলেন, ‘বর্তমানে খামারীরা কোনরকম টিকে আছে। প্রায় সময় ফিডের, বাচ্চা, ও ঔষধ পত্রের দাম বৃদ্ধি। সবকিছু মিলিয়ে আমরা করুন পরিস্থিতিতে। পল্ট্রি শিল্প এখন ধ্বংসের প্রান্তে। বড়- বড় কোম্পানিদের সেন্ডিকেটের কারণে আমারা এখন অসহায় অবস্থায়।বাজারে যখন মুরগির দাম বাড়ে তখন হৈইচৈই অবস্থা পরে। কিন্তু ফিডের দাম,বাচ্চার দাম বাড়লে সেটা নিয়ে কথা হয় না।
খামারীদের সংগঠনের সভাপতি রমজান আলী বলেন,আমাদের সংগঠনে ২০০০ এর উপর খামার ছিল। বর্তমানে ৫০ টারও কম খামারী কোনরকম তাদের ব্যবসায় টিকে ধরে আছে। বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিবর্তন, সেই সঙ্গে ফিডের দাম বৃদ্ধি, বাচ্চার দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে তারা এখন পথে বসে গেছে। সরকারের উচিত এসমস্ত প্রান্তিক খামারীদের সহজ সর্তে ঋণ দিয়ে, প্রনোদনাদনা দিয়ে তাদের উৎপাদনের ফেরানোর ব্যবস্থা করা।
প্রাণী সম্পদ বিভাগ কুড়িগ্রাম এর উপ পরিচালক (কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র) মো: আবদুল আজিজ প্রধান বলেন, যে তাপ প্রবাহ চলছে তাতে খামারিদের পর্যাপ্ত ফ্যানের ব্যবস্থা করতে হবে। সেডের যে পর্দা আছে উপর থেকে নীচ পর্যন্ত খুলে রাখতে হবে। বস্তা ভিজিয়ে টিনের চালের উপরে দিতে হবে, এবং সেই সঙ্গে বস্তা দিয়ে ছাদের মত করে দিতে হবে এবং পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।