রাজু আহম্মেদ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
ষোলনদী ও নয় উপজেলা নিয়ে গঠিত উত্তরের জেলা কুড়িগ্রাম। এ জেলার দক্ষিণের উপজেলা সাহেবের আলগা ইউনিয়নে দৈ খাওয়ার চরে জন্ম এক ভাবুক ছেলে এস.এম. শহিদুল ইসলাম সাগর। মাত্র ১৪ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণিতে কবিতা দিয়ে শুরু করেন তার লেখালেখি। নয় ভাই বোনের মধ্যে সপ্তম কিশোর কবি। দরিদ্র সংসারে কবিতা লেখা , নিজের পড়াশুনাও টিউশনির খরচ থেকেই তুলতে হয় তাকে।
চরঅঞ্চলে বেড়ে ওঠা মানুষ কবিতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবে, কবিতা লেখার চিরকুট ও কলম সাথে থাকবে এটা ভাবতে অবাক লাগে। আশপাশের লোকজন চরের কবি বলে সম্মোধন করেন। কিন্তু কবিতার প্রেমে কবি সাগরে ডুব দিয়েছে। কারো কান কথা শোনার সময় তার নাই। বেরিয়ে আসছে একের পর এক কবিতা।
২০১১ সালে এইচএসসি পাশ করেন কবি এস এম শহিদুল ইসলাম সাগর।
এরপর প্রথম কবিতার বই ‘লাল শাড়িতে বালি’ প্রকাশ পায়। প্রকাশনার অপেক্ষায় আছে ‘সংগ্রামী নূরজাহান’ বিজয়ের নিশানসহ আরো কয়েকটি কবিতার বই।
কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে ২০১৪ সালে বি.এস.এস পাস করেন কবি। দুর্বার গতিতে চলে সাহিত্য সাধনা তৈরি হলো ছোট গল্প ‘আমাদের খুকুমণি’। এবার একুশে বইমেলায় প্রকাশ পাবে বইটি। এছাড়াও ‘বসন্তে— বাসন্তী’ ‘অত্যাচারী শাসক’ ‘ইতি টপ হিরোইন’ ইত্যাদি।
সহকারি শিক্ষক হিসেবে কবি যোগ দিলেন দৈ খাওয়ার চর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অভাবের স্বভাব কিছুটা বদল হওয়া শুরু। থেমে নেই কবির সাহিত্য সাধনা রাতঅবধি চলে সাহিত্য নিয়ে খেলা।
এবার মনোনিবেশ করলেন উপন্যাস লিখবেন যেই বলা সেই কাজ উপন্যাস হিসেবে প্রকাশ পেল “ভালোবাসা বোঝে না নিষ্ঠুর এই পৃথিবী।” সারা পড়েছিল অনেক। এরপর ‘কোথায় তুমি শান্তনা’ ‘কতকাল দেখিনী তোমায়’ দু:খের মাঝেও সুখে আছি। এবার চলাঞ্চল থেকে উপজেলা এরপর জেলার মানুষদের কাছ থেকে সব্যসাচী লেখকের মর্যাদা পেতে শুরু করলেন কবি।
প্রত্যন্ত সেই চরঞ্চলে বসবাস করেও প্রতিভার অবদান প্রমান রেখে চলেছেন কবি এস.এম. শহিদুল ইসলাম সাগর। স্বপ্ন দেখেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে কিভাবে এগিয়ে নেয়া যায়। চরে কিভাবে আলো আসবে তা যেন কবি মনকে নাড়িয়ে তোলে। চরের অনেক মানুষ তার কাছে বই নিয়ে পড়ে তা ফেরত দিয়ে যায়। তাই কবি ইচ্ছা প্রকাশ করেন চরে একটি বই পড়ার ক্লাব করবেন।
বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী লেখক, কবি, সংগীত শিল্পী, গীতিকার, শিক্ষক এস. এম. শহিদুল ইসলাম সাগরকে নিয়ে রেডিও চিলমারীসহ জেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার লেখা কবিতা ও গান প্রচার হয়ে আসছে।
এক জীবনে তিনি অনেক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও এর প্রতি তার যে দায়বদ্ধতা তা সঠিকভাবে পালন করেছেন।
সময় এসেছে বাংলা সাহিত্যে ও বাংলা গানে উত্তরবঙ্গের কুড়িগ্রাম জেলার এমন একজন অতিভাবান ও নিষ্ঠাবান সাহিত্য চর্চাকারীর মূল্যায়ন আশা করা ভুল কিছু নয়।